নকল স্ত্রীকে মা’রল চিকি’ৎসক স্বামী, ম’রদে’হের পাশের চিরকুটেই মিলল রহ’স্য

শিক্ষানবিশ স্ত্রী সিরাজুম মনিরা সোমাকে মেরে আত্মহ’ত্যার নাটক সাজিয়েছিলেন অপর শিক্ষানবিশ চিকি’ৎসক এস এম রাকিবুল আজাদ ইম’রান। কিন্তু চিরকুটের সূত্র ধ’রে হ’ত্যার মূল রহ’স্য ভেদ করে আ’সল সত্য বের ক’রতে সক্ষম হয়েছে আ’ইনশৃ’ঙ্খলা বা’হিনী। এরই মধ্যে হ’ত্যার বিষয়ে রোববার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন অ’ভিযুক্ত ইম’রান।

গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেতের আমতলীর অন্বেষা গলির ১৯২/৬-এ নম্বর বাসার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে সোমা’র ম’রদে’হ উ’দ্ধার করা হয়। তখন ম’রদে’হের শয্যার পাশে ছিল একটি চিরকুট। তাতে লেখা- ‘বিদা’য় ডাক্তার সাহেব। আমি হাল ছে’ড়ে দিচ্ছি।’ সেখানে ঘুমের ওষুধের খালি পাতাও পাওয়া যায়।

পু’লিশ সূত্রের তথ্যানুযায়ী, ভাড়াটিয়া তথ্য ফরমে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েই ওই ফ্ল্যাটে সোমাকে নিয়ে থাকতে শিক্ষানবিশ চিকি’ৎসক ইম’রান। ঘ’টনার দিন সকালে ইম’রান বাড়ির মালিকের কাছে গিয়ে দা’বি করেন, তার স্ত্রী আত্মহ’ত্যা ক’রেছেন। রাতে দুইজনের মধ্যে ঝগড়া নিয়ে অভিমান করে আত্মহননের পথ বেছে নেন সোমা। ‘আত্মহ’ত্যার চিরকুট’, ঘরের দরজা ভে’ঙে ঢোকার আলামত ও ইম’রানের ভাষ্য দেখে এটি সত্যিই আত্মহ’ত্যা বলে প্রথমে সবাই মেনে নেয়।

কিন্তু ঘ’টনাস্থলের আলামতের স’ঙ্গে অ’ন্তত চারটি জায়গায় ইম’রানের বক্তব্যের অমিল পাওয়ায় মা’মলাটির তদ’ন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পু’লিশের (ডিবি) কাছে স্থা’নান্তর করা হয়। তাদের তদ’ন্তে উঠে আসে, কেন কী কারণে কীভাবে পরিকল্পিতভাবে সোমাকে হ’ত্যা করে আত্মহ’ত্যার নাটক সাজান ইম’রান।

পু’লিশ সূত্র বলছে, চীনের নানচাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি পাস ক’রেছেন সোমা ও ইম’রান। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায় তাদের পরিচয় হয়। ২০১৭ সালে দেশে ফি’রে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্র’স্তুতি নিতে থাকেন তারা। সোমা প্রথমে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে আত্মহ’ত্যার চেষ্টা চালান। তবে কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ওই সময় প্রায়ই সোমা’র স’ঙ্গে দেখা ক’রতে হাসপাতালে আসা-যাওয়া ক’রতেন ইম’রান। সোমাকে মা’নসিক শ’ক্তি জোগাতে গিয়ে ইম’রান ও সোমা’র মধ্যে প্রেমের স’স্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর বিএমডিসি পরীক্ষায় পাস করার পর ২০২০ সালের মা’র্চ থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শুরু করেন তারা। তখন থেকেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে খিলক্ষেতে বাসা ভাড়া নেন।

তদ’ন্ত সূত্র বলছে, তারা দুইজন অবিবাহিত ছিলেন। কিন্তু একই বাসায় স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস ক’রতেন। এর মধ্যে অন্য কারো স’ঙ্গে একই ধ’রনের স’স্পর্ক রয়েছে বলে দুইজন দুইজনকেই সন্দে’হ ক’রতেন। গত ২৩ জানুয়ারি একটি পরীক্ষা দেয়া ও সোমা’র যুক্তরাজ্যে পড়তে যাওয়া নিয়ে ঝগড়া হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইম’রান জা’নায়, উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডন যাওয়ার প্র’স্তুতি নেয়ায় সোমাকে ইম’রান বলতেন, লন্ডনে গিয়ে আমা’র মতো অন্য কারো স’ঙ্গে একই ধ’রনের স’স্পর্কে জড়াবে। সোমাও ইম’রানকে বলতেন, আমি লন্ডন চলে গেলে তুমিও তো দেশে আরেকজনের স’ঙ্গে সময় কাটাবে।

২৪ জানুয়ারি তাদের মধ্যে তখন তুমুল ঝগড়া শুরু হলে একপর্যায়ে ইম’রানের গালে সজো’রে চড় মা’রেন সোমা। সেই অপমানের জেদ থেকে সোমাকে হ’ত্যার চূড়ান্ত মনস্থির করেন চিকি’ৎসক ইম’রান। ২৫ জানুয়ারি তারা আ’লাদা কক্ষে ঘুমান।

যেভাবে সোমাকে হ’ত্যা করা হয়

তদ’ন্ত সূত্র অনুযায়ী, ভোরে সোমা’র কক্ষের দরজা খু’লে ইম’রান দেখেন, তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। অচেতন অব’স্থায় প’ড়ে আছেন সোমা। শয্যার পাশে ঘুমের ওষুধের খালি পাতা। তখনই ইম’রানের মাথায় ভূত চা’পে। পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ঘুমন্ত অব’স্থায় সোমা’র মাথা থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে কালো স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দেন। সোমা’র দুই হাতও প্যাঁচানো হয় স্কচটেপে, যাতে হাত দিয়ে মুখে প্যাঁচানো পলিথিন খুলতে না পারেন।

হ’ত্যাকে আত্মহ’ত্যা রূপ দিতে ইম’রানের নাটক

নিজেকে বাঁ’চাতে সোমা’র হাতের অক্ষরের স’ঙ্গে মিলিয়ে একটি সাজানো আত্মহ’ত্যার চিরকুট লেখেন ইম’রান। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ম’রদে’হের স’ঙ্গে কাটানোর পর বাড়ির মালিককে গিয়ে তার কথিত স্ত্রী আত্মহ’ত্যা ক’রেছেন বলে দা’বি করেন।

সোমা’র বাবা রাজশাহীর চারঘাট উপজে’লার উপ-সহকারী প্রা’ণিসম্পদ ক’র্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, খিলক্ষেতের বাসার সব খরচ আম’রা দিতাম। সেখানে অন্য কাউকে নিয়ে মেয়ে থাকার বিষয়টি জা’না ছিল না। চীনে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে ইম’রান দু-একবার রাজশাহীতে এসেছিল।

তিনি আরো বলেন, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন বুনেছিলাম। ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ শিক্ষার জ লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল তার। তার আগেই…!

ডিবির ক্যান্টনমেন্ট টিমের অতিরি’ক্ত পু’লিশ সুপার এসএম রেজাউল হক বলেন, সোমা’র ম’রদে’হ মাথা থেকে গলা পর্যন্ত পলিথিনে মোড়ানো, স্কচটেপে আবার হাত বাঁ’ধা ছিল। হাত বাঁ’ধা মানুষ কীভাবে আত্মহ’ত্যা ক’রতে পারে। এছাড়া চিরকুটের লেখার স’ঙ্গে সোমা’র হাতের লেখার স’ঙ্গে পুরোপুরি মিলছিল না। ওই চিরকুটে ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘বাই ডাক্তার সাহেব। আই এম গিভি আপ। এ সন্দে’হ থেকে আ’সল ঘ’টনা বেরিয়ে আসে।